সর্বশেষ

» ইমাম সমাবেশে সিলেট বিভাগীয় কমিশনার

প্রকাশিত: ২৭. জুলাই. ২০২৫ | রবিবার

ডেস্ক নিউজ ::: সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার খান মোহাম্মদ রেজাউন নবী বলেছেন, নতুন বাংলাদেশ গড়তে হলে ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সকলের সহযোগিতা নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। বাংলাদেশ একটি সম্ভাবনাময় দেশ, এ দেশ থেকে লক্ষ লক্ষ কোটি টাকা দুর্নীতির মাধ্যমে বিদেশে পাচার করে ফ্যাসিস্টরা দেশকে আজ তলা বিহীন ঝুড়িতে পরিণত করেছে। দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ফিরাতে হলে সততা ও নিষ্ঠার সাথে সকলের কাজ করতে হবে। স্বাধীনতার পর থেকে যারা দেশ পরিচালনা করেছেন তাদের ইতিহাস তুলে ধরে বিভাগীয় কমিশনার আরো বলেন, যারা দুর্নীতি করে তারা দেশ ও জাতির শত্রু। প্রত্যেক দুর্নীতিবাজ কে আইনের আওতায় এনে বিচার করা হলে এদেশে আর গণহারে দুর্নীতি বন্ধ হবে। দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রকারীরা সর্বদা তৎপর, এরা যে কোন মুহূর্তে ছোবল মারার চেষ্টা করতে পারে। সকল রকমের দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র রুখতে দেশ প্রেমিক জনতার শিষাঢালা প্রাচীরের ঐক্যবদ্ধ প্লাটফর্ম তৈরি করতে ওলামায়ে কেরাম ও ইমাম সমাজের ভূমিকা সবার শীর্ষে।
বিভাগীয় কমিশনার বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতি সিলেট বিভাগীয় কমিটির উদ্যোগে গতকাল ২৬ জুলাই শনিবার সকাল ১০টায় ইসলামিক ফাউন্ডেশন সিলেট বিভাগীয় কার্যালয়ের অডিটোরিয়ামে ’২৪-এর জুলাই বিপ্লবের চেতনা, বৈষম্যহীন, দুর্নীতিমুক্ত ও সুশাসন প্রতিষ্ঠায় ঐক্যর অপরিহার্যতা” শীর্ষক ইমাম সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপরোক্ত কথাগুলো বলেন।
বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতি সিলেট বিভাগীয় কমিটির উদ্যোগে আয়োজিত বিভাগীয় ইমাম সম্মেলনে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে জামায়াতে ইসলামী সিলেট জেলা আমির মাওলানা হাবিবুর রহমান বলেন, জুলাই বিপ্লবের আন্দোলন ছিল একটি ঐতিহাসিক আন্দোলন। তিনি আরো বলেন, সৎ কাজের আদেশ এবং অসৎ কাজের নিষেধ করতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। এক্ষেত্রে ইমামগণ ভূমিকা পালন করতে হবে। পবিত্র মিম্বরকে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় শক্তিশালী করা প্রত্যেক মুসলমানের ইমানী দায়িত্ব। ইমামদের পিছনে সমালোচনা করা নিজের অধিনস্ত জনবলের মত ইমামদেরকে মূল্যায়ন করা হলে সমাজে কখনো শান্তি কামনা করা অসম্ভব।
বিভাগীয় কমিটির সভাপতি মাওলানা হাবীব আহমদ শিহাব এর সভাপতিত্বে ও জেলা সভাপতি মাওলানা এহসান উদ্দিন ও মাওলানা আব্দুল হক এর যৌথ সঞ্চালনায় আয়োজিত সমাবেশে প্রধান আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন সমিতির কেন্দ্রীয় সভাপতি আলহাজ্ব মাওলানা কাজী আবু হুরায়রা। তিনি বলেন, মসজিদের ইমামগণ দেশ জাতির যেকোনো ক্রান্তিলগ্নে জানবাজি রেখে ভূমিকা পালন করেন। অথচ তারা যথাযথ মূল্যায়িত হননা। করোনা মহামারী ও ভয়াবহ বন্যা সহ যেকোন দুর্যোগময় মুহূর্তে মসজিদের ইমামগণ নিজেদের সর্বস্ব উৎসর্গ করে জাতির কল্যাণে কাজ করেন। বিশেষ করে ’২৪ এর জুলাই বিপ্লবে মসজিদের ইমামগণ ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে জনগণকে সচেতন করে তুলেন। মসজিদের মিম্বরকে সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধের বলিষ্ঠভূমি পালণ করেন।
অনুষ্ঠানে কি নোট উপস্থাপন করেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় মহাসচিব মাওলানা শাহ মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম। তিনি তার বক্তব্যে বলেন, মসজিদের ইমামগণ অল্প বেতনে সরকারের সকল উন্নয়ন কর্মসূচিতে নিরলস ভাবে ভূমিকা পালন করে যান। সরকারি যে কোন জনকল্যাণমূলক সার্কুলার বাস্তবায়নে মসজিদের ইমামগণ সর্বাগ্রে থাকেন। এজন্য ইমাম মুয়াজ্জিন কল্যাণ ট্রাস্ট কে ১০০০ কোটি টাকায় উন্নীত করে, একটি ইমাম মুয়াজ্জিন কল্যাণ ব্যাংক চালু করা ইমামদের অন্যতম দাবী। মসজিদের মক্তবকে প্রাকপ্রাথমিকের আওতায় নিয়ে ইমাম মোয়াজ্জিনগণকে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ করা।
অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন বিশিষ্ট চিকিৎসক মাউন্ট এডোরা হাসপাতালের এমডি বিশিষ্ট কার্ডিওলজিস্ট প্রফেসর ডাঃ আখতারুজ্জামান। তিনি বলেন, তুলনামূলকভাবে মসজিদের ইমামগণ হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত কম হন। কারণ তারা তুলনামূলকভাবে আল্লাহ ভীরু, মহান আল্লাহর উপর তাদের আস্থা ও বিশ্বাস রয়েছে। তিনি হার্টকে সুস্থ রাখার জন্য শরীর চর্চা ও খাদ্যাবাস পরিবর্তনের উপর গুরুপ আরোপ করেন।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন, বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতির সিনিয়র সহ-সভাপতি মাওলানা মুফতি আখতারুজ্জামান, কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মুফতি মহিউদ্দীন কাসেমী, কেন্দ্রীয় অর্থ সচিব অধ্যক্ষ মাওলানা ইজহারুল হক, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম সিলেট উত্তর জেলা সভাপতি মাওলানা আতাউর রহমান কোম্পানীগঞ্জী, হযরত শাহজালাল রহ: তাওহিদী কাফেলা সিলেটের সেক্রেটারি মাওলানা শাহ মমশাদ আহমদ, কওমী ঐক্য পরিষদের সমন্বয়ক মাওলানা সৈয়দ শামীম আহমদ, খেলাফত মজলিস নেতা হাফিজ মাওলানা শাব্বির আহমদ, জামায়াতে ইসলামী সিলেট মহানগরীর নায়েবে আমীর মাওলানা হাফিজ মিফতা উদ্দিন, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন সিলেট মহানগর শাখার সমন্বয়ক দিলওয়ার হোসেন।
ক্বারী মাওলানা আবিদ হাসানের পবিত্র কুরআন থেকে তেলাওয়াতের মাধ্যমে সূচিত অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন সমিতির সুনামগঞ্জ জেলা সভাপতি মাওলানা ইদ্রিস আহমদ, হবিগঞ্জ জেলা সভাপতি মাওলানা আবদাল হোসেন খান, মৌলভীবাজার জেলার সহ সভাপতি মাওলানা মকবুল হোসেন খান, সিলেট মহানগর সেক্রেটারী মাওলানা সিরাজুল ইসলাম, সিলেট জেলা সেক্রেটারী মাওলানা জালাল উদ্দিন ভূঁইয়া, সুনামগঞ্জ জেলা সেক্রেটারী মাওলানা নুর হোসাইন, মৌলভীবাজার জেলা সেক্রেটারী মাওলানা হিফজুর রহমান ফুয়াদ প্রমুখ।
সিলেট জেলা সভাপতি মাওলানা মোঃ এহসান উদ্দিন নিম্নোক্ত দাবি পেশ করেন :
অবিলম্বে মসজিদ ব্যবস্থাপনা নীতিমালা বাস্তবায়ন করা। ইসলাম অবমাননার আইন প্রণয়ন করা। নারী কমিশনে শীর্ষ ইসলামী স্কলারদের নিয়ে সার্বজনীন নারী কমিশন প্রণয়ন করা। জুলাই যোদ্ধাদের জাতীয় বীর ঘোষণা করা ও সরকারিভাবে চিকিৎসা নিশ্চিত করা। সরকারি প্রতিষ্ঠানের মসজিদের ইমাম ও মোজ্জনিক এর চাকুরী জাতীয়করণ করা। সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজি, গুম-হত্যার বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি বাস্তবায়ন করা। মসজিদ ভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রম কে জাতীয় শিক্ষা কার্যক্রমের প্রাকপ্রাথমিকে অন্তর্ভুক্ত করে জাতীয়করণ করা। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ইমামকে ধর্মীয় শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেয়া।
বক্তব্য রাখেন ইসলামিক ফাউন্ডেশন সিলেটে সাবেক ডাইরেক্টর আবু সিদ্দিকুর রহমান। অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ও উপস্থিত ছিলেন কওমি মাদ্রাসা ঐক্য পরিষদের সমন্বয়ক মাওলানা নিয়ামত উল্লাহ খাসদবিরী, মাওলানা বদর উদ্দিন বিন ইসহাক আল মাদানী, সিয়ানা ট্রাস্ট এর চেয়ারম্যান মুফতি জিয়াউর রহমান সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক সামাজিক নেতৃবৃন্দ। অনুষ্ঠানে সিলেট বিভাগের প্রতিনিধিত্বকারী ৩৫০ জন ইমাম উপস্থিত ছিলেন।
সমাবেশে সিলেট বিভাগের ১৫ জন জুলাই যোদ্ধাকে সম্মাননা প্রদান করা হয়।
সভাপতির বক্তব্যে মাওলানা হাবীব আহমদ শিহাব বাংলাদেশের উন্নতি অগ্রগতিতে দেশের ইমাম সমাজের অবদানকে খাটো করে দেখার কোনো সুযোগ নেই। ৫ই আগস্ট এর পরে মসজিদের ইমামগণ এলাকা ও মহল্লা কেন্দ্রিক শান্তি কমিটি গঠন করে মানুষের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বলিষ্ঠ ভূমিকা রেখেছেন। তাই ইমামগণকে সরকারি ভাবে স্বীকৃতি দিয়ে জুলাই আগস্ট এর সাদা মনের মানুষ হিসাবে সরকার কর্তৃক স্বীকৃতি আহবান জানান। বিজ্ঞপ্তি