সর্বশেষ

» আন্দোলনে সক্রিয় ও জনপ্রিয় নেতাদের বাছাই করছে বিএনপি

প্রকাশিত: ৩১. জুলাই. ২০২৫ | বৃহস্পতিবার

সিলেট বিএম ডেস্ক ::: নির্বাচনের দিনক্ষণ চূড়ান্ত না হলেও প্রার্থী ঠিক করছে গুরুত্বপূর্ণ দলগুলো। ইতিমধ্যে জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন, এনসিপি, গণঅধিকার পরিষদও তাদের প্রার্থীদের প্রাথমিক তালিকা প্রকাশ করেছে। দলীয় প্রার্থীর বিষয়ে বিএনপি আনুষ্ঠানিকভাবে এখন পর্যন্ত কোনো কিছুর আভাস দেয়নি। তবে দলটি ভেতরে ভেতরে প্রার্থী বাছাইয়ের কাজ শুরু করেছে। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সরাসরি তত্ত্বাবধানে দায়িত্বশীল সাংগঠনিক নেতারা এ লক্ষ্যে মাঠ পর্যায়ে কাজ করছেন। দলটির এবারের লক্ষ্য নবীন-প্রবীণের মিশেলে প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করা। গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী বাস্তবতায় এবার আন্দোলনে সক্রিয় ও মাঠে জনপ্রিয় নেতাদের বাছাই করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি।

সূত্র জানায়, ফেব্রুয়ারি মাসকে টার্গেট করে নির্বাচনি প্রস্তুতি পুরোদমে চালিয়ে যাচ্ছে বিএনপি। ইতিমধ্যে নির্বাচনি চূড়ান্ত কর্মকৌশল প্রণয়ন করা হয়েছে। দলের হাইকমান্ড অত্যন্ত গোপনে তিন স্তরে যাচাই-বাছাই কার্যক্রম চালিয়েছে। ৩০০ আসনে সম্ভাব্য প্রার্থীর একটি খসড়া তালিকার কাজ শেষ করেছে দলটি। এ তালিকায় অধিকাংশ আসনেই একাধিক প্রার্থী রয়েছেন। খসড়া তালিকার প্রার্থীদের আমলনামাও পৌঁছে গেছে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছে। এমনকি তারেক রহমান সরাসরি মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সঙ্গে কথা বলেছেন। বিশেষ করে যারা গত ২০১৮ সালের নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছিলেন এবং মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন; তাদের সঙ্গে কথা বলছেন। অনেককে বিভিন্ন আসনে কাজ করার সরাসরি নির্দেশনাও দিচ্ছেন। মনোনয়নপ্রত্যাশীরা এটিকে হাইকমান্ডের গ্রিন সিগন্যাল হিসেবেই ধরে নিচ্ছেন এবং নিজ এলাকায় তা প্রচার করছেন।

জানা গেছে, সবশেষ বিএনপি ২০১৮ সালের নির্বাচনে অংশ নেয়। তখন চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া কারাগারে ছিলেন। এরপর ২০২৪ সালের নির্বাচন বর্জন করে দলটি। ২০১৮ সালে দলের মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন প্রায় আড়াই হাজার প্রার্থী। এখনও বিভিন্ন এলাকায় তিন থেকে পাঁচজন প্রার্থী আছেন। দলের সুবিধাজনক পরিস্থিতির কারণে ভোট ঘনিয়ে এলে এই সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর বিএনপির বেশিরভাগ নেতাকর্মী নিজ নিজ এলাকায় আস্তানা গেঁড়েছেন। সবসময় কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে এলাকায় নিজেকে ব্যস্ত রাখছেন।

এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান সময়ের আলোকে বলেন, প্রার্থী বাছাই নিয়ে আমাদের এখনও আনুষ্ঠানিক কোনো আলোচনা হয়নি। এখন সংস্কারসহ নানা উটকো ঝামেলা সামনে আসছে। এগুলো সামলাতে হচ্ছে। নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার পর দল প্রার্থী ঠিক করার বিষয়ে কাজ করবে পুরোদমে। আর দলীয় প্রার্থী তো মোটামুটি ঠিক করাই আছে। চেয়ারম্যান সবার সম্পর্কে জানেন। প্রার্থী চূড়ান্ত করার ক্ষেত্রে বিগত আন্দোলনসহ নানা বিষয় সামনে আসবে।
২০১৮ সালের নির্বাচনে প্রার্থীদের কি এবার অগ্রাধিকার দেওয়া হবে কি না? জবাবে তিনি বলেন, ২০১৮ সালের পর দেশে অনেক কিছু ঘটে গেছে। দলের আন্দোলন-সংগ্রাম, জুলাই বিপ্লব সবই আছে। আন্দোলনের ভূমিকাসহ সবকিছুই বিবেচনা করা হবে।

স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী সময়ের আলোকে বলেন, বিএনপি নির্বাচনমুখী দল। এতদিন মানুষের ভোটের জন্য লড়াই করে আসছে। আজকে ঘোষণা দিলেই বিএনপি কালকেই ভোট করতে প্রস্তুত আছে। প্রার্থী ঠিক করা খুব কঠিন কোনো কাজ নয়। ভোটের দিনক্ষণ ঘোষণা হলে প্রার্থী ঠিক হয়ে যাবে।

এ প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় সময়ের আলোকে বলেন, আমাদের নির্বাচনের প্রস্তুতি শতভাগের চেয়েও বেশি আছে। ৩০০ আসনে ৪ থেকে ৫ জন করে প্রার্থী আছেন। তফসিল ঘোষণা হলে এগুলো কমিয়ে আনা হবে। ১৬-১৭ বছর রাজপথে লড়াই করার পর এতটুকু প্রস্তুতি থাকাটা তো স্বাভাবিক।

বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, মূলত পটপরিবর্তনের পর থেকেই আমাদের উচ্চ পর্যায়ের একটি সাংগঠনিক টিম দলের মধ্যে কাজ করছেন। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের নির্দেশে সব বিভাগে কাজ চলছে। বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা নিয়মিত রিপোর্ট করছেন। ৫ আগস্টের পরবর্তী কর্মকাণ্ড নিশ্চয়ই সামনে থাকবে। যোগ্য ও ক্লিন ইমেজের নবীন-প্রবীণ সবাই অগ্রাধিকার পাবেন।

আরেকজন সিনিয়র নেতা বলেন, প্রায় একশ প্রার্থী তো মুখে মুখেই ঠিক করা থাকে সবসময়। হয়তো কিছু রদবদল হয়। এর মধ্যে সিনিয়র অনেক নেতা আছেন। এবার হয়তো জুলাইকে গুরুত্ব দেওয়া হবে। আন্দোলনে সক্রিয় অনেক তরুণরা ধানের শীষের টিকেট পেতে পারেন।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, প্রত্যেকের এসিআর (বার্ষিক গোপনীয় প্রতিবেদন) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের কাছে আছে। উনি দূরে থাকলেও আমাদের চেয়ে বেশি খোঁজখবর রাখেন। প্রার্থী বাছাইয়ে অবশ্যই সঠিক মূল্যায়ন হবে। সবদিক বিবেচনা করেই প্রার্থী দেওয়া হবে।