সর্বশেষ

» ১৬ ঘণ্টা দুর্ভোগের পর সুনামগঞ্জের পরিবহন ধর্মঘট প্রত্যাহার

প্রকাশিত: ০৪. আগস্ট. ২০২৫ | সোমবার

সিলেট বিএম ডেস্ক ::: সুনামগঞ্জের কর্মবিরতি শুরুর ১৬ ঘণ্টা পর সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছেন পরিবহন মালিক শ্রমিকরা। রোববার (০৪ আগস্ট) দুপুরে জেলা প্রশাসকের সম্মেলনে কক্ষে কর্মবিরতির প্রত্যাহার ঘোষণা করেন জেলা পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি সুজাউল কবির।

জানা যায়, রোববার দুপুরে সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও পরিবহন মালিক শ্রমিকদের সঙ্গে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার জন্য শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে সকলের কাছে দুঃখ প্রকাশ করেন সুনামগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. আব্দুল লতিফ।

তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অনেক মেধাবী ও ভদ্র। তবে যেহেতু একটা ঘটনা ঘটে গেছে তার জন্য আমি দুঃখ প্রকাশ করছি এবং আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কখনও আর এমনটা করবে না বলে আশ্বস্ত করছি।

এদিকে এমন ঘটনা আর পুনরাবৃত্তি ঘটবে না এমন আশ্বাসে দীর্ঘ ১৬ ঘণ্টা পর কর্মবিরতি প্রত্যাহার করেছেন সুনামগঞ্জের আন্দোলনরত পরিবহন মালিক শ্রমিকরা।

জেলা পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি সুজাউল কবির বলেন, যেহেতু বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর দুঃখ প্রকাশ করেছেন ও তিনি কথা দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আর কোনোও শিক্ষার্থী চালক কিংবা হেলপারদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করবে না সেজন্য আজকে এই মুহূর্তে আমরা সবাই সিদ্ধান্তে নিয়ে অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি প্রত্যাহার করে সারাদেশের সঙ্গে যানচলাচল শুরু করছি।

এরআগে রোববার সন্ধ্যা থেকে কোনো বাস সুনামগঞ্জ ছেড়ে যায়নি। সোমবার সকালে থেকে সিএনজি অটোরিকশার চালকেরা ধর্মঘটে যোগ দেন। কেউ কেউ সিএনজি অটোরিকশা চালানোর চেষ্টা করলে তাতে বাধা দেন শ্রমিকেরা।

সকালে সিলেট যাবেন বলে জেলা শহরের বাস টার্মিনালে আসেন তাহিরপুর উপজেলার বাসিন্দা এরশাদ মিয়া। সিলেটের একটি বেসরকারি হাসপাতালে তাঁর এক আত্মীয় চিকিৎসাধীন। কিন্তু বাস টার্মিনালে এসে দেখেন কোনো বাস চলছে না। এরশাদ মিয়া বলেন, কখন বাস চলবে, সেটিও কেউ বলতে পারছেন না। এতে মানুষের ভোগান্তি হচ্ছে। প্রশাসনের উচিত দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া।

টাঙ্গুয়ার হাওরে ঘুরতে আসা ঢাকার বাসিন্দা সামিয়ান ইসলাম বলেন, ‘সকালের বাসে ঢাকায় যাব। এ জন্য টিকিট নেওয়া ছিল। এখন এসে দেখি বাস চলছে না। কী করব, বঝুতে পারছি না। সিলেটেও যাওয়া যাচ্ছে না।’

সুনামগঞ্জে দূরপাল্লার একটি পরিবহনের ব্যবস্থাপক বলেন, বাসে টিকিট দেওয়ার পর রোববার সন্ধ্যায় হঠাৎ করে ঘোষণা দেওয়া হয় বাস চলবে না। এরপর তাঁরা পরিবহন শ্রমিকদের অনেক বুঝিয়েছেন, অন্তত রোববার রাতে যেন বাস চলে, এতে যাঁরা টিকিট নিয়েছেন তারা নিজ নিজ গন্তব্যে চলে যেতে পারবেন, কিন্তু শ্রমিকেরা শোনেননি।

তিনি বলেন, রাতে বিকল্প ব্যবস্থায় অনেকে সিলেটে গেছেন, কিন্তু সোমবার সকাল থেকে সব যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেন শ্রমিকেরা।’

জেলা পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সদস্যরা জানান, তিন দফা দাবিতে শ্রমিকেরা কর্মবিরতির ডাক দেন। তাঁদের তিন দফা দাবির মধ্যে ছিলো- শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, শ্রমিকদের ওপর হামলার ঘটনার বিচার ও কারাগারে থাকা শ্রমিকের মুক্তি।

রোববার সকালে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বাস ভাড়া নিয়ে একটি বাসের শ্রমিকের ঝগড়া হয়। এর জেরে বিকেলে দুই ঘণ্টা সুনামগঞ্জ-সিলেট সড়ক অবরোধ করেন পরিবহনশ্রমিকেরা। পরে তাঁরা কর্মবিরতির ঘোষণা দেন। এরপর সুনামগঞ্জ থেকে সিলেটসহ দেশের অন্য কোথাও বাস ছেড়ে যায়নি।

সুনামগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্থায়ী ক্যাম্পাস শান্তিগঞ্জ উপজেলায় সুনামগঞ্জ-সিলেট সড়কের পাশে সুনামগঞ্জ টেক্সটাইল ইনস্টিটিউট অবস্থিত। জেলা শহর থেকে এটির দূরত্ব ১৭ কিলোমিটার।

পরিবহন শ্রমিক ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রোববার সকালে জেলা শহর থেকে কয়েকজন শিক্ষার্থী সিলেটগামী একটি বাসে করে ক্যাম্পাসে যান। সেখানে নামার সময় ভাড়া নিয়ে শ্রমিক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে ঝগড়া হয়।

পরিবহনশ্রমিকদের অভিযোগ, শিক্ষার্থীরা শান্তিগঞ্জে ক্যাম্পাসে নামার সময় ভাড়া নিয়ে কথা–কাটাকাটির একপর্যায়ে সেখানে একটি গাড়ি ভাঙচুর করেন। শ্রমিকদের মারধর করে ক্যাম্পাসে আটকে রাখেন। এই ঘটনা জানাজানি হলে দোষীদের বিচার দাবিতে বেলা তিনটার দিকে সুনামগঞ্জ বাস টার্মিনালের সামনে সড়ক অবরোধ করেন পরিবহনশ্রমিকেরা। এ সময় সড়কের দুদিকে যানবাহন আটকা পড়ে। ভোগান্তিতে পড়েন মানুষজন। পরে পুলিশ গিয়ে শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বললে বিকাল পাঁচটার দিকে অবরোধ তুলে নেওয়া হয়।

জেলা বাস-মিনিবাস, মাইক্রোবাস শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক নুরুল হক বলেন, ‘বারবার শ্রমিকদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের এ ধরনের ঘটনা ঘটছে। কিন্তু শ্রমিকেরা ন্যায্য বিচার পাননি। একটি দুর্ঘটনার জেরে দেলোয়ার হোসেন নামে একজন শ্রমিক পাঁচ মাস ধরে জেলে আছেন। আমরা তাঁর মুক্তি চাই। এ ছাড়া আনোয়ার হোসেন নামে সিএনজিচালিত অটোরিকশার আরেক শ্রমিক হামলার শিকার হয়েছিলেন। মামলা হওয়ার পরও পুলিশ আসামিদের গ্রেপ্তার করছে না।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের কয়েকজন শিক্ষার্থী সুনামগঞ্জ জেলা শহর থেকে শান্তিগঞ্জ আসার সময় অর্ধেক ভাড়া দেওয়া নিয়ে বাসের চালকের সহকারীর সঙ্গে কথা–কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে ওই সহকারী এক শিক্ষার্থীকে ধাক্কা দেন। এ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে ঝামেলা বাধে।