- বাঁকবদলের ৩৬ জুলাই
- জুলাই ঘটনাপ্রবাহ-৩৬ দিনে ফ্যাসিস্ট হাসিনার পতন
- শাহপরান থানা পুলিশের অভিযানে ২৩ বস্তা চিনি সহ পিকআপ আটক”গ্রেফতার ২ জন।
- সিলেট ৮নং ওয়ার্ডস্থ মোহনা সমাজ কল্যাণ সংস্থার সেলাই মেশিন ও হুইল চেয়ার বিতরণ
- জালালাবাদ থানার তেমুখি থেকে ৩০ পিস ইয়াবা সহ গ্রেফতার।
- ফিরে দেখা: এইদিনে গোলাপগঞ্জে গুলিতে প্রাণ হারান ৬ জন
- গোয়াইনঘাটে দুর্ধর্ষ ডাকাত বাহারকে গ্রেফতার করলো পুলিশ
- চার দিনের ব্যবধানে শাহজিবাজার বিদ্যুৎকেন্দ্রে আবারো আগুন
- জুলাইয়ের চেতনার পরিপূর্ণ বাস্তবায়ন করতে হবে: প্রধান উপদেষ্টা
- জুলাইয়ের অর্জন ধরে রাখতে রাজনৈতিক ঐক্য চায় জনগণ-মাওলানা হাবিবুর রহমান
» বাঁকবদলের ৩৬ জুলাই
প্রকাশিত: ০৫. আগস্ট. ২০২৫ | মঙ্গলবার

সিলেট বিএম ডেস্ক ::: প্রবল গণআন্দোলনের মুখে এক বছর আগে আজকের এই দিনে শেখ হাসিনার সুদীর্ঘ কর্তৃত্ববাদী শাসনের অবসান ঘটে। ছাত্র-জনতার যে আন্দোলন পরিচিতি পেয়েছে ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান’ নামে। তারই প্রথম বার্ষিকী ‘৩৬ জুলাই’ আজ মঙ্গলবার। বাঙালি জাতির জন্য স্মরণীয় একটি দিন। টানা সাড়ে ১৫ বছর ক্ষমতায় থাকার পর গত বছরের ৫ আগস্ট শিক্ষার্থী-জনতার অভ্যুত্থানে পতন হয় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার, যে গণঅভ্যুত্থানের সূচনা হয়েছিল সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের আন্দোলন থেকে। ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর সামরিক বিমানে করে দেশ ছেড়ে ভারতে গিয়ে আশ্রয় নেন কর্তৃত্ববাদী শাসক শেখ হাসিনা। আর এর মধ্য দিয়ে বাংলাদের রাজনীতিতে শুরু হয় নতুন এক বাঁকবদলের।
সংবাদ সংস্থা এএফপি তখন জানিয়েছিল, শেখ হাসিনা তার ছোট বোন শেখ রেহানাকে নিয়ে গণভবন থেকে নিরাপদে বাংলাদেশ ছেড়েছেন। দেশ ছাড়ার আগে জাতির উদ্দেশ্যে একটি ভাষণ রেকর্ড করতে চেয়েছিলেন তিনি; কিন্তু সেই সুযোগ না হওয়ায় আগেই দেশ ছাড়েন শেখ হাসিনা।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের দিন ৫ আগস্টকে আজ ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস’ হিসেবে পালন করবে গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে গঠিত বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এ উপলক্ষে আজ মঙ্গলবার সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।
সরকারি গেজেট অনুযায়ী, গণঅভ্যুত্থানে শহীদের সংখ্যা ৮৩৬। এর মধ্যে বিএনপির অঙ্গসহযোগী সংগঠনের ৪২২ জন শহীদ হন বলে দাবি দলটির।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উদযাপন উপলক্ষে সরকারের উদ্যোগে মাসব্যাপী অনুষ্ঠানমালা শুরু হয় গত ১ জুলাই। আজ ৫ আগস্ট পর্যন্ত এসব অনুষ্ঠান হবে। আজ জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ পাঠ করবেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। দিনব্যাপী ‘৩৬ জুলাই’ উদযাপনের অংশ হিসেবে এ দিন বিকেল ৫টায় এই ঘোষণাপত্র উপস্থাপন করা হবে। গত ১ জুলাই থেকে মাসব্যাপী কর্মসূচি পালন করছে বিএনপি, জামায়াত ও জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল।
২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ের মধ্য দিয়ে ২০০৯ সালের জানুয়ারিতে সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ। এরপর দশম, একাদশ ও দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে টানা সাড়ে ১৫ বছর রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় ছিল দলটি। বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলোর দাবি, ২০১৪ সালে একতরফা নির্বাচন, ২০১৮ সালে রাতের নির্বাচন এবং ২০২৪ সালে ডামি নির্বাচন হয়েছিল। ২০১১ সালে উচ্চ আদালতের রায়ে নির্বাচনকালীন নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল হওয়ার পর এ তিনটি নির্বাচন দলীয় সরকার তথা শেখ হাসিনা সরকারের অধীনে হয়।
বিএনপি, জামায়াতসহ বিরোধী দলগুলো তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহালের দাবিতে আন্দোলনে নামে, যা পরে একদফা তথা সরকার পতনের আন্দোলনে রূপ নেয়।
এর মধ্যে ২০১৮ সালে সরকারি চাকরিতে কোটাবিরোধী আন্দোলনে নামেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনের মুখে নির্বাহী আদেশে ২০১৮ সালের ১১ এপ্রিল সরকারি চাকরি থেকে কোটা ব্যবস্থা বিলুপ্ত করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরে একটি সংগঠনের রিটের পরিপ্রেক্ষিতে গত বছরের ৬ জুন হাইকোর্ট আবারও কোটা বহাল করে রায় দেন। এর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। পরদিন ‘বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী আন্দোলন’-এর ব্যানারে সারা দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সংগঠিত হতে থাকেন তারা। একপর্যায়ে আন্দোলন সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। পুরো জুলাই মাসজুড়ে চলে এই আন্দোলন। এর মধ্যে একপর্যায়ে সরকার কোটা সংস্কার করে। তবে কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সরকারের সহিংসতার জেরে হতাহতের ঘটনায় তা প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের এক দফা দাবিতে পরিণত হয়।
মূলত সরকারপ্রধানের তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে দেওয়া বক্তব্য, আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ও ছাত্রলীগের হুমকি আন্দোলনে গতি সঞ্চার করে। এমন অবস্থায় ১৪ জুলাই আন্দোলনকারীদের রাজাকারের নাতি-পুতি হিসেবে ইঙ্গিত করেছেন অভিযোগ তুলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ক্ষোভে ফেটে পড়েন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। অভিমানে নিজেদের ‘রাজাকার’ আখ্যা দিয়ে তারা স্লোগান দেন সারা দেশের ক্যাম্পাসে। অবস্থা বেগতিক দেখে আন্দোলন দমনে ছাত্রলীগ, পুলিশ ও বহিরাগত হেলমেট বাহিনীর সহযোগিতায় বেদম পেটানো হয় আন্দোলনকারীদের।
এর মধ্যে ১৬ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভে পুলিশ গুলি চালালে শহীদ হন বুক চিতিয়ে দাঁড়ানো রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) শিক্ষার্থী ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আবু সাঈদ। এ দৃশ্য দেখে হতভম্ব হয়ে যায় পুরো জাতি। ক্ষোভের আগুন ছড়িয়ে পড়ে সবখানে। সরকারের নির্দেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দমন-পীড়নও বেড়ে যায় কয়েকগুণ। চলতে থাকে গণগ্রেপ্তার। ১৯ জুলাই মধ্যরাত থেকে সরকার দেশব্যাপী কারফিউ ঘোষণা করে এবং সেনা মোতায়েন করে।
আন্দোলনের একপর্যায়ে ঢাকার আকাশে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে হেলিকপ্টার মোতায়েন করা হয়। গুলিতে ঝাঁজরা হয়ে মারা যান ফুটফুটে শিশু, মেধাবী শিক্ষার্থী, নিম্ন আয়ের মানুষ, পথচারীসহ অনেকে। প্রতিদিন রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় লাশ পড়তে থাকে। সাউন্ড গ্রেনেডের শব্দ, টিয়ার গ্যাসের শেল, বাতাসে বারুদের গন্ধে এক যুদ্ধ পরিস্থিতি দেখা দেয় দেশে।
৩০ জুলাই কোটা আন্দোলন ঘিরে নিহত ব্যক্তিদের স্মরণে দেশব্যাপী শোক পালনের আহ্বান জানায় সরকার। এ আহ্বান প্রত্যাখ্যান করে একক বা ঐক্যবদ্ধভাবে লাল কাপড় মুখে ও চোখে বেঁধে ছবি তোলা এবং অনলাইনে প্রচার কর্মসূচি ঘোষণা করে আন্দোলনকারীরা। লাখো মানুষ বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাদের প্রোফাইলে লাল রঙে রাঙিয়ে তোলে। একই দিন বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা সমাবেশ করেন, অভিভাবকরা প্রতিবাদ সমাবেশ করেন এবং বিশিষ্ট নাগরিকরা জনসমক্ষে হতাহতের জন্য সরকারের কাছে জবাবদিহিতা দাবি করেন। অর্থাৎ শিক্ষার্থী ছাড়াও অন্যান্য শ্রেণি-পেশার মানুষ বিক্ষোভে যোগ দিতে শুরু করেন।
পরদিন ৩১ জুলাই বিক্ষোভকারীরা ‘জাস্টিসের জন্য মার্চ’ কর্মসূচি ঘোষণা করে। ১ আগস্ট সরকার সন্ত্রাসবিরোধী আইনে জামায়াত-শিবিরকে নিষিদ্ধ করে প্রজ্ঞাপন জারি করে। সহিংসতায় নিহতদের বিচার চেয়ে ২ আগস্ট জাতীয় প্রেস ক্লাব থেকে শহীদ মিনার পর্যন্ত লাখো শিক্ষার্থী, শিক্ষক, অভিভাবক, আইনজীবী, সুশীল সমাজের সদস্য ও রাজনৈতিক কর্মীরা ‘দ্রোহযাত্রা’-তে যোগ দেয়। ৩ আগস্ট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আন্দোলনকারীদের ডাকে সর্বস্তরের মানুষ জড়ো হলে এক অভূতপূর্ব দৃশ্যের অবতারণা হয়। স্বতঃস্ফূর্ত এক অভ্যুত্থান থেকে সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম ৪৮ ঘণ্টা সময় বেঁধে দিয়ে একদফা ঘোষণা করেন। হাজারও জনতা সমস্বরে প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের দাবিকে সমর্থন করেন এক আঙুল দেখিয়ে। এমন অবস্থায় শেখ হাসিনা বিক্ষোভকারীদের আলোচনায় বসার আহ্বান জানালেও আন্দোলনকারীরা সে প্রস্তাব ফিরিয়ে দেয়।
এর মধ্যে সরকারের পদত্যাগের পর অন্তর্বর্তী সরকারের পরিকল্পনার রূপরেখা দেন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক। এদিকে সমন্বয়করাও চাইছিলেন আন্দোলনকে দ্রুত পূর্ণতা দিতে। তাই শুরুতে ৬ আগস্ট ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচির আহ্বান জানানো হলেও পরে তা একদিন এগিয়ে ৫ আগস্ট করার ঘোষণা দেওয়া হয়।
এদিকে ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচি ঠেকাতে সরকারও পদক্ষেপ নেয়। তবে বেলা ১১টার পর থেকে ঢাকার পথে ঢল নামে মানুষের। কারফিউ উপেক্ষা করে বিভিন্ন স্থান থেকে আসতে শুরু করেন তারা। একপর্যায়ে শাহবাগ, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারসহ গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট লোকে লোকারণ্য হয়ে ওঠে। এমন অবস্থায় পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে আলোচনার পর পদত্যাগ করতে রাজি হন শেখ হাসিনা। তিনি ছোট বোনকে সঙ্গে নিয়ে দেশ ছাড়েন। দীর্ঘদিন পর শেখ হাসিনার পতন উদযাপন করতে লাখো মানুষ রাস্তায় নেমে আসে। গণভবন, সংসদ ভবন ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে ঢুকে পড়েন তারা।
ধর্মীয় উপাসনালয়ে প্রার্থনা আজ: গণঅভ্যুত্থান দিবস যথাযথ মর্যাদায় পালনে আজ দেশের প্রতিটি ধর্মীয় উপাসনালয়ে মোনাজাত ও প্রার্থনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। গতকাল এক তথ্য বিবরণীতে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় এ কথা জানায়। এ ছাড়া রাজধানীর গোলাপবাগ মাঠে আজ ‘যাত্রাবাড়িতে গণহত্যা’ শীর্ষক জুলাই-২৪ পুনর্জাগরণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে কারিগরি ও মাদ্রাসা বিভাগ।
সর্বাধিক পঠিত খবর
- গোবিন্দগঞ্জ আব্দুল হক স্মৃতি ডিগ্রি কলেজ ছাত্রদলের কমিটি ঘোষনা করেছে সুনামগঞ্জ জেলা ছাত্রদল
- সিলেট জেলা ও মহানগর ছাত্রদলের বিবৃতি – ইশতিয়াক রাজু ছাত্রদলের কেউ নয়।
- মদনমোহন কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সভাপতি নির্বাচিত হওয়ায় কামরান উদ্দিন অপুকে সংবর্ধনা
- একনেক সভায় ৮ হাজার ১৪৯ কোটি ৩৮ লাখ টাকার ১২ প্রকল্প অনুমোদন
- দুর্দিনের সাহসী নেত্রী তাহসিনা রুশদীর লুনা