সর্বশেষ

» সিলেট-৪ আসনে মনোনয়ন নিয়ে বিএনপির অভ্যন্তরীণ টানা-পোড়েন

প্রকাশিত: ০৯. নভেম্বর. ২০২৫ | রবিবার

গোয়াইনঘাট প্রতিনিধি ::: আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সিলেট-৪ (গোয়াইনঘাট–কোম্পানীগঞ্জ–জৈন্তাপুর) আসনে বিএনপির মনোনয়ন নিয়ে দলটির অভ্যন্তরে সৃষ্টি হয়েছে মতবিরোধ ও চাপা অসন্তোষ। কেন্দ্র থেকে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র ও দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আরিফুল হক চৌধুরীকে এই আসনে প্রার্থী করার প্রেক্ষাপটে স্থানীয় নেতা-কর্মীদের একাংশ প্রকাশ্যে ‘লোকাল প্রার্থী’র দাবিতে মাঠে নেমেছে।

গত বৃহস্পতিবার (৭ নভেম্বর) দিবাগত রাত থেকে শুরু করে পরদিন শনিবার (৮ নভেম্বর) মধ্যরাত পর্যন্ত গোয়াইনঘাট ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন স্থানে পৃথক পৃথক মিছিল ও মশাল মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। রাত ৯টা থেকে শুরু হয়ে মিছিল চলে মধ্যরাত পর্যন্ত। সালুটিকর-গোয়াইনঘাট মহাসড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে খণ্ড খণ্ড মিছিল এসে জড়ো হয়।

মিছিলে অংশগ্রহণকারী কর্মীরা ‘লোকাল চাই হাকিম ভাই’, ‘আর নয় বিদেশি, এবারে স্বদেশি’, ‘হাকিম ছাড়া মানব না’ ইত্যাদি স্লোগান দেন।

এর আগে, বৃহস্পতিবার (৭ নভেম্বর) রাত দুইটার পর কোম্পানীগঞ্জ ও গোয়াইনঘাট উপজেলার অন্তত ১৩টি স্থানে দলীয় প্রতীক ‘ধানের শীষ’-এর মনোনয়নপ্রত্যাশী আব্দুল হাকিম চৌধুরীর সমর্থনে খণ্ড মিছিল বের হয়। একই সময়ে জেলা বিএনপির উপদেষ্টা হেলাল উদ্দিন আহমদের সমর্থকরাও ‘লোকাল চাই, হেলাল ভাই চাই’ স্লোগান দেন।

দলের তৃণমূলে প্রভাবশালী নেতা হিসেবে পরিচিত আব্দুল হাকিম চৌধুরী বলেন, “দল যাকে মনোনয়ন দেবে, আমি তা মেনে নেব। তবে জামায়াতপন্থী বা বাইরে থেকে আনা প্রার্থী হলে এখানে আমাদের কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হতে পারে। ভোটাররা স্থানীয় মুখ দেখতে চায়।”

একই দাবি জানিয়েছেন হেলাল উদ্দিন আহমদও। তিনি বলেন, “দলীয় হাই কমান্ড এখনো আনুষ্ঠানিক কোনো ঘোষণা দেয়নি। আমি স্থানীয় প্রার্থী, এলাকার মানুষ আমাকে চায়। দল চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত না দেওয়া পর্যন্ত আমি প্রচার চালিয়ে যাব।”

জাতীয় নির্বাহী কমিটির সহসাংগঠনিক সম্পাদক মিফতা সিদ্দিকী বলেন, “আমি এ আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী। যাকে দল মনোনয়ন দেবে, আমরা সকলে মিলে তার পক্ষে কাজ করব।”

দলের কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আরিফুল হক চৌধুরীকে সিলেট-৪ আসনে প্রার্থী করা হয়েছে। তিনি আগে সিলেট-১ আসনের মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন। কিন্তু চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সরাসরি নির্দেশে তিনি সিলেট-৪ আসনে প্রার্থিতা গ্রহণ করেন।

গত ৬ নভেম্বর রাতে ঢাকা থেকে মনোনয়ন নিয়ে সিলেট ফেরার পর ৭ নভেম্বর শুক্রবার বাদ জুমা গোয়াইনঘাটের রাধানগর বাজার জামে মসজিদে নামাজ আদায় করে প্রয়াত এমপি দিলদার হোসেন সেলিমের কবর জিয়ারতের মধ্য দিয়ে তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে প্রচার শুরু করেন।

আরিফুল হক বলেন, দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান আমাকে আসনে মনোনয়ন দিয়েছেন। খুব শীঘ্রই দলের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসবে। “এই আসনের প্রতিটি অলিগলি আমার পরিচিত। আমি জনগণের সমস্যা সম্পর্কে অবগত। দলের মনোনয়নে যদি নির্বাচিত হই, তাহলে প্রথম এক বছরের মধ্যেই স্থানীয় সমস্যাগুলোর সমাধান করব। যারা মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন, তারা সবাই আমাদের ত্যাগী ও সম্মানিত নেতা। সবাইকে সঙ্গে নিয়ে কাজ করব।

গত ৫ ই আগস্ট সরকার পতনের পর থেকে সিলেট-৪ আসনটি দীর্ঘদিন ধরে বিএনপির একটি শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। একাধিক প্রার্থীর সক্রিয় প্রচারণা এবং তৃণমূলের দাবি-দাওয়া প্রকাশ্যে আসায় এই আসনে দলের ভেতরে ঐক্য ও শৃঙ্খলা বজায় ছিল। সম্প্রতি আরিফুল হক চৌধুরী নিজেকে প্রার্থী ঘোষণা করার পর তৃণমূলের নেতাকর্মীদের মধ্যে অভ্যন্তরীণ অভ্যন্তরী কুন্দল ও টানাপোড়েন দেখা দিয়েছে। তবে স্থানীয় বিএনপির নীতি নির্ধারকরা মনে করছেন, আনুষ্ঠানিক ঘোষণা না থাকায়, তা নিয়েই প্রশ্ন উঠছে। তবে কেন্দ্র থেকে প্রার্থিতা ঘোষণা চূড়ান্ত হলে মাঠের বাস্তবতা সমর্থন জোগাবে, সেটি নির্ভর করবে দলের সাংগঠনিক শক্তি ও প্রার্থীর গণভিত্তির ওপর।

প্রসঙ্গত: সিলেট-১ আসনের মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন আরিফুল হক। তবে দলের উচ্চপর্যায়ের পক্ষ থেকে তাকে একাধিকবার সিলেট-৪ আসনে প্রার্থী হওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়, যা তিনি প্রথমে স্বীকৃতি দেননি। পরে দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া সরাসরি তাকে সিলেট-৪ আসনে প্রার্থী হওয়ার নির্দেশ দেন, যা অমান্য করার সুযোগ নেই। গত ৬ নভেম্বর জাতীয় সংসদের ২৩৭টি আসনের সম্ভাব্য প্রার্থীর নাম ঘোষণা বিএনপি। এর মধ্যে সিলেট জেলার ছয়টি আসনের মধ্যে চারটিতে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়। শেষে সিলেট-১ আসনের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পেয়েছেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা খন্দকার আবদুল মুক্তাদির।