সর্বশেষ

» দুধের বদলে পানি পান করে দিন পার করছে গাজার শিশুরা

প্রকাশিত: ৩০. জুলাই. ২০২৫ | বুধবার

আন্তর্জাতিক ডেস্ক ::: দখলদার ইসরায়েলের মাসব্যাপী অবরোধে চরম খাদ্য সংকটে ধুঁকছে গাজা উপত্যকা। আর এই সংকটে সবচেয়ে বড় বিপদের মুখে পড়েছে গাজার শিশুরা। জাতিসংঘের খাদ্য নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, গাজায় বর্তমানে বাস্তবেই দুর্ভিক্ষের সবচেয়ে ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে।

যুদ্ধ শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত ৮৮ জনের বেশি শিশু অপুষ্টি ও না খেয়ে মৃত্যুবরণ করেছে। শিশুখাদ্য, দুধ এবং চিকিৎসা-সহায়তাসামগ্রী পুরোপুরি ফুরিয়ে গেছে। সেখানকার পরিবারগুলো দিনে এক বেলা খেতে পারলেই ভাগ্যবান মনে করছে নিজেদের।

সংবাদমাধ্যম আলজাজিরার সাংবাদিক হিন্দ খুদারি দেইর আল-বালাহ থেকে এক ভিডিও রিপোর্ট করছেন। যেখানে তিনি গাজার মায়েদের সঙ্গে কথা বলে জেনেছেন— তারা কেবল সন্তানদের মুখে খাবার তুলে দিতে গিয়ে চরম অসহায় পরিস্থিতির মুখোমুখি হচ্ছেন।

গাজার তাবুতে আশ্রয় নেওয়া মায়েরা এখন আর সন্তানদের কী খাওয়াবেন তা নিয়ে ভাবছেন না। তারা শুধু ভাবছেন, ‘সন্তানকে আরেকদিন বাঁচিয়ে রাখা যাবে কিনা’।

গাজার এক মা, লিনা। তার ৯ মাসের ছেলে ওমর অপুষ্টিতে ভুগছে, সেই সঙ্গে হাঁপানি আক্রান্ত। গত ছয় সপ্তাহে এক ফোঁটা দুধও পায়নি সে। মা লিনা বলেন, ‘আমার সন্তানের জন্য দুধ নেই, খাবার নেই, কোনো বিকল্প নেই— আছে শুধু পানি। পানি ছাড়া কিছুই দিতে পারছি না।’

চার মাস ধরে তারা একটুও ফর্মুলা দুধ পাননি। সম্প্রতি সামান্য কিছু জোগাড় করতে পেরেছেন। কিন্তু তা কতটুকুই বা? লিনা প্রশ্ন ছুড়ে বললেন, ‘একজন মা হয়ে যখন নিজের শিশুকে দুধের জন্য কাঁদতে দেখি, অথচ কিছু দিতে পারি না— তার চেয়ে বড় যন্ত্রণা কিছু হয় না।’

খান ইউনিসের আরেক মা, জুড। একটি তাবুতে তার ১০ মাস বয়সী জমজ সন্তান টোফি ও না-কে বড় করছেন। তারা কখনোই মাতৃদুগ্ধ পান করেনি। কারণ, জুড নিজেই এত অপুষ্টিতে ভুগছেন যে তার দেহে দুধ উৎপাদনই হচ্ছে না।

তিনি শিশুদের খাওয়াচ্ছেন শুধু মসুর ডাল আর পানি। না আছে দুধ, না আছে সুষম খাদ্য। আছে শুধু প্রতিদিনের এক অসম লড়াই।

গাজার বাজারে কখনো যদি ফর্মুলা দুধ মিলে, তা হয় মেয়াদোত্তীর্ণ, না হয় এত দামি যে, কেউ কেনার ক্ষমতা রাখে না।

যুদ্ধবিধ্বস্থ গাজার প্রত্যেক মায়ের এখন একটিই প্রার্থনা— যেন আগামীকালও তার সন্তান বেঁচে থাকে। হয়তো কখনো সাহায্য এসে পৌঁছাবে ফিলিস্তিনে এই তাদের একমাত্র আশা।